কক্সবাজারে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে পর্যটক

ওমর ফারুক হিরু :


কক্সবাজারে প্রতিবছর বর্ষবরণের আগে ও পরে সমাগম হয় লাখ লাখ পর্যটকের। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে সেই চিত্র পাল্টাতে শুরু করছে। দিন দিন কমে আসছে পর্যটকের সংখ্যা। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর পর কয়েকবার বর্ষবরণকে ঘিরে কোনা ধরনের আয়োজন না থাকা সহ নানা বিধি নিষেধ এর কারণে এমনটা হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে পর্যটকের আগমন শূন্যের কোটায় নেমে আসতে বেশি সময় লাগবেনা। তাদের প্রত্যাশা নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্যদিয়ে আগের মত বর্ষবরণের আয়োজন করা হোক।

অন্যদিকে প্রশাসন বলছে নিরাপত্তার খাতিরে কিছু বিধি নিষেধ রাখা হলেও পর্যটক সংশ্লিষ্টদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়না বাড়তি আয়োজনে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পাহাড়-সাগর আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির রূপ দেখতে দুর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে ভ্রমণ পিপাসুরা। বিশেষ করে থার্টি ফাস্ট নাইট বরণ করতে পর্যটন নগরীতে জড়ো হয় কয়েক লাখ পর্যটক। কখনও কখনও এই সংখ্যা ৩ লাখও ছাড়িয়ে যায়। শহরের প্রায় ৫’শ হোটেল-মোটেল, কটেজ আর রির্সোটগুলোতে ভরপুর থাকে পর্যটকে।

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রেমে মাতাল হলেও তাদের বিনোদনের জন্য এই শহরে নেই তেমন কোন ব্যবস্থা। তার মধ্যে গত ৩ বছর ধরে (২০১৭ সাল থেকে) বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার কথা বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওপেন কনর্সাটসহ নানা আয়োজন।
যদিও এর আগে থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে ছিল ওপেন কনসার্টসহ নানা আয়োজন। বর্ণিল সাজে সাজানো হত পর্যটন নগরীকে। পর্যটক সংশ্লিষ্টদের মাঝেও থাকত উদসাহ-উদ্দীপনা। সেই অনুযায়ী পর্যটকের ঢলও ছিল।

এদিকে এসব আয়োজন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষবরণে কমে আসছে পর্যটকের সংখ্যা। হিসাব অনুযায়ী গত বছরগুলোতে ৩ লাখের বেশি পর্যটক আসলেও তা কমে এই বছর লাখে দাঁড়িয়েছে।

বাড়তি আয়োজন না থাকায় হতাশ বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটক। তারা বলেছেন নিরাপত্তা দরকার, কিন্তু নিরাপত্তার কথা বলে বিনোদন বন্ধ করে দেওয়ার কোন মানে হয়না। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তীতে হয়তো আসবো না।
ভারতের কলকাতা থেকে বেড়াতে আসা ঐশি রায় জানান, ‘আমরা শুনেছি কক্সবাজারে খুবই আনন্দের সাথে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা হয়। তাই খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে মজা করব। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। নয়টার পরেই বিচ থেকে হোটেলের রুমে চলে যেতে হয়েছে। কিন্তু কলকতায় থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে রাতভর নাচ-গানসহ নানা আয়োজন চলে। এভাবে হলে পরের বার আর আসবো না।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা রাকিবুল হাসান জানান, ‘বিয়ের আগে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে এসে খুবই আনন্দ করেছি। ওপেন কনসার্টসহ ছিল নানা আয়োজন। এবার বউকে নিয়ে এসেছি সেই আনন্দ উপভোগ করার জন্য। কিন্তু তা হয়নি। হয়ত পরের বার আর আসা হবেনা।’

সিলেট থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান, কক্সবাজার প্রায়-ই আসা হয়। কারণ এমন সুন্দর জায়গা আর কোথাও নেই। তবে এবারে খুবই হতাশ লাগছে থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কোন আয়োজন না থাকায়। নিরাপত্তা জোরদার রেখে প্রোগ্রাম করা যেত।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই হচ্ছে প্রশাসনের মূল কাজ। থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে এই নগরীতে। তাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বেড়াতে আসা দুই থেকে আড়াই হাজার বিদেশীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। তবে হোটেলের ইনডোরে (অভ্যন্তরে) প্রোগ্রাম করার সুযোগ থাকলেও পর্যটক সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কাউকে আবেদন করতে দেখা যায়নি।

এই কথা অস্বীকার করে ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে প্রোগ্রাম করার জন্য আমরা অনেকবার প্রশাসনের কাছে গিয়ে ফিরে এসেছি। তারা বার বার নিরাপত্তার কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরাও চাই নিরাপত্তা। তবে নিরাপত্তার দোহায় দিয়ে পর্যটন খাতে এমন ক্ষতি মেনে নেওয়া যায়না। তাই প্রত্যাশা থাকবে নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রোগ্রাম করা হউক। এতে করে ভরপুর হবে পর্যটকে। নয়ত একসময় পর্যটকশূন্য হবে এই নগরী।

সচেতন মহল বলছেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অর্থনীতির সাথে পর্যটন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সবার প্রত্যাশা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্যদিয়ে আরো বেশি উন্নত করা হোক পর্যটন শিল্প।